Tuesday, 22 February 2022

দেশের নতুন পতেঙ্গা টার্মিনালের কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে মার্কস লাইন

দেশের নতুন পতেঙ্গা টার্মিনালের কাজ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে মার্কস লাইন,প্রস্তাব জমা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।আরো বিশ্বের নামীদামী কোম্পানি চায় কাজ করতে।

এই নতুন পতেঙ্গা টার্মিনালের পরিচালনার কাজ পেতে তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান জোর তদবির চালাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে ঐসব দেশের সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এছাড়াও আরো কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান পিসিটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব দিয়েছে। 

গ্লোবাল পোর্ট এবং টার্মিনাল অপারেটর এপিএম টার্মিনাল,যা ডেনিশ শিপিং কোম্পানি এপি মুলার মার্কস লাইনের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।তারা চট্টগ্রাম বন্দরের নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের উন্নয়ন ও পরিচালনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সংস্থাটি ইতিমধ্যেই তার প্রস্তাব জমা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।

এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরের পিসিটি পরিচালনার কাজ পেতে সৌদি আরবের রেড সি, দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড।

সৌদি আরবের রেড সি নামক প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এক ব্যক্তি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

ডিপি ওয়ার্ল্ডের পক্ষ থেকে পিসিটি পরিচালনার ব্যাপারে একটি প্রকল্প প্রস্তাব চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে।

বিশ্বব্যাপী মার্কস লাইন কনটেইনার পরিবহনের যে বিস্তৃতি এবং টার্মিনাল বা জেটির মূল প্রাণ হচ্ছে পণ্যবাহী কনটেইনার ওঠানামা। এই ক্ষেত্রে মার্কস লাইনের কোম্পানি তথা এপি মুলার কর্তৃক পিসিটি পরিচালনা এবং জেটিকে কর্মময় করে রাখার ক্ষেত্রে তার অবস্থান এগিয়ে থাকবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্যবাহী কনটেইনার পিসিটি থেকে সরাসরি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গন্তব্যে পৌঁছানোর পথ উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে বলে বন্দর বিশেষজ্ঞদের অভিমত। যা তাদের ব্যবসার স্বার্থে প্রসারিত করতে পারে।

২০১৮ সালে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক পর্যায়ে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়। আগামী এপ্রিলে বন্দরের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। 

তিনটি কনটেইনার ও কার্গো জেটি এবং একটি ডলফিন জেটি (তেলবাহী জাহাজের জেটি) নিয়ে পিসিটি টার্মিনাল নির্মিত হচ্ছে।

এই টার্মিনালের নির্মাণের ফলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে আসবে আরো বেশি গতিশীলতা।

ভারতের তুলা রফতানি বাড়ার পূর্বাভাস

ভারতের তুলা রফতানি বাড়ার পূর্বাভাস

চলতি মৌসুমে ভারতের তুলা রফতানি বাড়ার পূর্বাভাস মিলেছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় আমদানিকারক দেশগুলোর পোশাক খাতে তুলার চাহিদা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এতে এসব দেশ ভারত থেকে তুলা ক্রয়ের পরিমাণ বাড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ইউএসডিএর ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের (এফএএস) মুম্বাই অফিসের দেয়া এক পূর্বাভাসে দেখা গেছে, ২০২১-২২ মৌসুমে ভারত ৫৯ লাখ বেল (প্রতি বেলে ৪৮০ পাউন্ড) তুলা রফতানি করতে সক্ষম হবে। ইউএসডিএর দাপ্তরিক পূর্বাভাসের তুলনায় এটি এক লাখ বেল বেশি।

চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১-২২ বিপণন মৌসুম শেষ হবে। এফএএসের মুম্বাই অফিসের প্রাক্কলন অনুযায়ী, শুধু গত বছরের ডিসেম্বরেই ভারতের তুলা রফতানি আগের মাসের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেড়ে যায়। বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, চীন ও ইন্দোনেশিয়া ছিল দেশটির প্রধান প্রধান রফতানি গন্তব্য। এর মধ্যে বাংলাদেশ ভারতের শীর্ষ তুলা ক্রেতার তকমা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের তুলা রফতানি বাজারের হিস্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ শতাংশে। একইভাবে তুলা থেকে তৈরি সুতা ও তুলাজাত পণ্য রফতানিও ক্রমেই বাড়ছে।

দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক বাণিজ্যসংক্রান্ত তথ্যে বলা হয়, চলতি বছর জানুয়ারিতে মূল্যবানের দিক থেকে ভারতের তুলাজাত সুতা, ফ্যাব্রিকস, তৈরি পণ্য ও হ্যান্ডলুম পণ্য রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। যদিও ডিসেম্বরের তুলনায় এসব পণ্যের সম্মিলিত রফতানি ৩৩ শতাংশ কমেছে।

এদিকে জানুয়ারিতে সব ধরনের তৈরি পোশাক রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। ডিসেম্বরের তুলনায় বেড়েছে ১২ শতাংশ।

মুম্বাই এফএএস অফিসের পূর্বাভাস বলছে, ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমে ভারতে তুলা আমদানি ১০ লাখ বেলে পৌঁছবে। ইউএসডিএর অফিশিয়াল প্রাক্কলনেও একই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সংস্থাটির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে আমদানি ২১ শতাংশ বেড়েছে।

এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্থানীয় চাহিদার ৩৪ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়া থেকে ২৮ শতাংশ আমদানি করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট চাহিদার বড় একটি অংশই এসেছে এসব দেশ থেকে। এছাড়া মিসর, গ্রিস ও ক্যামেরুন থেকেও কিছু তুলা আমদানি করা হয়েছে। ৬৫ শতাংশ আমদানিই এসেছে দক্ষিণ ভারতের বন্দরগুলো দিয়ে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত তুলা আমদানি করে তা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পুনরায় রফতানি করে। ভারতের তুলা মিলগুলো এরই মধ্যে বড় পরিসরে রফতানি চুক্তি সম্পন্ন করেছে। মিলগুলোয় ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা থাকায় আমদানি বাড়ছে।

তথ্য বলছে, চলতি বাজেটে দেশটির সরকার তুলার আমদানি শুল্ক আগের মতো রেখেছে। দেশটিতে উৎপাদিত তুলার দাম বেশি থাকায় মিলগুলো আমদানির মাধ্যমেই রফতানি চাহিদা পূরণে বেশি আগ্রহী।

এফএএস মুম্বাইয়ের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমে ভারতে ২ কোটি ৭৪ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হতে পারে। সব মিলিয়ে তুলা আবাদ হবে ১ কোটি ২১ হেক্টর জমিতে। যদিও তুলাবীজের দাম, ঊর্ধ্বমুখী উৎপাদন ব্যয়ের কারণে চাষীরা বাজারে তুলা সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
চলতি মৌসুমে ভারতের মিলগুলোয় ২ কোটি ৬৫ লাখ বেল তুলা ব্যবহার হতে পারে। রফতানি চাহিদায় উল্লম্ফনের কারণে ব্যবহার বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

বণিক বার্তা ডেস্ক

Wednesday, 16 February 2022

ইউরোপীয় তিন দেশ চায় সরাসরি বাংলা ইউরো ট্রানজিট।

ইউরোপীয় তিন দেশ চায় সরাসরি বাংলা ইউরো ট্রানজিট। 

দেশগুলো হচ্ছে, ইউরোপের দেশ পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া ও ডেনমার্ক। চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে একটি কম্পানি সরাসরি কনটেইনার জাহাজ সার্ভিস চালুর পর এই তিনটি দেশ আগ্রহ দেখিয়েছে।

 এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম-ইউরোপ রুটে নিরবচ্ছিন্ন পণ্য পরিবহনের জট খুলছে।পুর্বে চট্টগ্রাম থেকে ইউরোপে পণ্য পরিবহন হতো ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর হয়েই। 

অর্থাৎ ইউরোপগামী ভেসেল চট্টগ্রাম হয়ে শ্রীলংকা,সিংগাপুর বন্দর হয়ে তবেই গন্তব্যে যাত্রা করত।

তবে,এখন সরাসরি সার্ভিস চালু হওয়ায় সময় সাশ্রয়, অর্থ সাশ্রয় ও ভোগান্তি কমবে। 

উল্লেখে,গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-ইতালি রুটে ‘রিফ লাইন’ নামের একটি কম্পানি সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু করে। দুটি জাহাজ দিয়ে তারা এই কনটেইনার সার্ভিস চালু করে।যা ইউরো-বাংলা উভয় দেশের বাণিজ্যে এক নব দিগন্তের সূচনা করে

ইউরোপগামী প্রথম জাহাজ ‘সুঙ্গা চিতা’ ৯৫০ একক রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম ইতালির রেভেনা বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। এর মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে প্রথম ইউরোপ সার্ভিস চালু হয়। রপ্তানিকারকরা ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছেন। এর মূল কারণ এই সার্ভিসে মাত্র ১৬ দিনে ইতালি পৌঁছানোর সুযোগ।

অন্যদিকে,মাতারবাড়ি বন্দর চালু হলে দেশের অর্থনীতি কতটা বদলে যাবে তা নিয়ে আশার আলো গুনতে শুরু করেছে মাতারবাড়ি বন্দর প্রকল্পের মানুষেরা।

দেশের অর্থনীতিতে বিপুল অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি ট্রেড ভলিউম বাড়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। 

Tuesday, 15 February 2022

পোশাকের বর্জ্য থেকে সুতা তৈরি করে সিমকো

পোশাকের বর্জ্য থেকে সুতা তৈরি করে সিমকো

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে পোশাকের মূল কাঁচামাল সুতা উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে পৃথিবীতে। বাড়ছে পোশাকের বর্জ্য, অপচয় হচ্ছে পানি, বিষাক্ত রাসায়নিকে নষ্ট হচ্ছে মাটি, বাড়ছে কার্বন নিঃসরণও। বিনষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। দূষিত হচ্ছে পরিবেশও।

এত কিছুর পরও এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে পোশাকবর্জ্যের মাত্র ১২ শতাংশ পুনর্ব্যবহার বা রিসাইকেল হয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য পোশাকবর্জ্যের পুনর্ব্যবহার নিয়ে চলছে পৃথিবীজুড়ে নানা গবেষণা। বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোও ঝুঁকতে শুরু করেছে পুনঃ উৎপাদিত পণ্যে। বাংলাদেশেও পোশাকবর্জ্যের পুনর্ব্যবহার শুরু হয়েছে। একাধিক প্রতিষ্ঠান এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইল। সাইক্লো ফাইবার নামে তাদের একটি সুতার ব্র্যান্ডও রয়েছে।

সাইক্লো ফাইবারের সুতা পুরোনো পোশাক বা ঝুট কাপড় দিয়ে উৎপাদন করে সিমকো। ২০১০ সালে সিমকো গ্রুপ যখন এই প্রকল্পে হাত দেয়, তখনো বিষয়টি এতটা জোরেশোরে আলোচনায় আসেনি। ফলে অনেকেই তখন বেশ অবাক হয়েছিলেন। কেউ কেউ এ উদ্যোগের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন।

এমনটাই জানালেন সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইলের পরিচালক মুস্তাফাইন মুনীর। তিনি বলেন, এক দশক আগে আমার বাবা খাজা মুনীর মাশুকুল্লাহ এই উদ্যোগ নেন। সে সময় একটি স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠানের টি-শার্টের ঝুট থেকে সুতা তৈরির বিষয়টি জানার পর বাবা ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অনুধাবন করতে পারেন। তখন বাবা ভাবলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর টি-শার্ট তৈরি হয়। সেই টি-শার্টের ঝুট থেকে পুনঃ উৎপাদনের মাধ্যমে সহজেই মানসম্পন্ন সুতা উৎপাদন করা সম্ভব। এভাবেই শুরু। আসলে সম্ভাবনার পাশাপাশি অব্যবহৃত কাঁচামাল ব্যবহারে মূল্য সুবিধার বিষয়টি বাবাকে উদ্যোগী করে তোলে।

বাবার কাছ থেকে শুনে এই উদ্যোগের প্রতি আগ্রহী হন যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা মুস্তাফাইন মুনীর। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাশাপাশি সংগীত ও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের ওপর পড়াশোনা করেন। পড়ালেখা শেষে ২০১১ সালে দেশে ফিরে হাল ধরেন এই প্রকল্পে। তার হাত ধরেই এখন এগিয়ে চলছে সিমকোর পুনঃ উৎপাদন ব্যবসা।

সিমকো সুতা তৈরির জন্য সাধারণত পোশাক কারখানা থেকে সংগ্রহ করা ঝুট কাপড় ব্যবহার করে। এ ছাড়া কোনো ব্র্যান্ডের বাতিল হওয়া নতুন পোশাকও ব্যবহার করা হয়। তবে সুতার শক্তি বাড়াতে অনেক ক্ষেত্রে নতুন তন্তু বিশেষ করে তুলা (ভার্জিন কটন) যুক্ত করা হয়। শক্তির তারতম্য অনুযায়ী ঝুটের সঙ্গে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ অন্য তন্তু মেশানো হয়ে থাকে।

ঝুট কিংবা পুরোনো কাপড় দিয়ে সুতা তৈরি করতে কোনো রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর বা রং করার প্রয়োজন হয় না। তাতে পানির সাশ্রয় হয়। কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণও কমানো যায়। তবে বাংলাদেশে উৎপাদিত ঝুটের মাত্র ২০ শতাংশ দেশে পুনর্ব্যবহার হচ্ছে। বাকি ৮০ শতাংশ রপ্তানি হচ্ছে ভারত ও চীনে। এমন তথ্য দিয়ে মুস্তাফাইন মুনীর জানান, দেশীয় বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে এই ঝুট পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। যদিও বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডই তাদের নির্ধারিত তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়ায় ঝুট পাওয়া কিছুটা সহজ হয়েছে।

নিট ও ওভেন—উভয় ধরনের পোশাকের জন্যই সুতা তৈরি করে থাকে সাইক্লো। তবে এই সুতায় মাঝেমধ্যে রঙের তারতম্য ঘটে থাকে। যদিও সেটা খুব একটা যে চোখে পড়ার মতো, তা-ও নয়। সাইক্লো ফাইবার ৬ সিঙ্গেল থেকে ৩০ সিঙ্গেল পর্যন্ত বিভিন্ন কাউন্টের হয়ে থাকে। পুনঃ উৎপাদিত সুতার দাম সাধারণ সুতার চেয়ে ১৫-২০ শতাংশ কম বলে জানান মুস্তাফাইন মুনীর।

সাইক্লোর তৈরি সুতা দিয়ে টি-শার্ট, পোলো শার্ট, সোয়েটার, ডেনিম কাপড়, শার্ট, জিনস ইত্যাদি ছাড়াও গ্লাভস, মোজা, কমফোর্টার, হোম টেক্সটাইল, ব্যাগসহ নানা ধরনের অনুষঙ্গও তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি পণ্যের ধরন অনুযায়ী তৈরি হয় সুতা। বর্তমানে সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইল এইচঅ্যান্ডএম, জারা, প্রাইমার্ক, বারশকা, বেস্টসেলার, লিডল, কিয়াভি, কোহল’স, ওয়ালমার্ট, কিক, হেমা, রেনার, অ্যাডিডাস, নাইকি, টার্গেট, ইন্ডিটেক্সসহ অন্তত ৪০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুতা নিয়ে থাকে এইচঅ্যান্ডএম। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মৌসুমেই ১৫ লাখ কেজি সুতা কিনে থাকে।

সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইলের পরিবেশবান্ধব সুতা তৈরির এ যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালে। মুস্তাফাইন মুনীর জানান, ২০১৫ থেকে ২০২১—এই ছয় বছরে পোশাকবর্জ্য ব্যবহার করে ১০ হাজার টনের বেশি সুতা উৎপাদিত হয়েছে ঝুট ব্যবহার করে। এতে সাশ্রয় হয়েছে ৭৫ হাজার টন কার্বন ডাই-অক্সাইড, ২০৬ কোটি লিটার পানি এবং ৭১ হাজার টন ক্ষতিকারক বিষাক্ত বর্জ্য।

ময়মনসিংহের ভালুকায় সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইলের কারখানায় সুতা উৎপাদন হচ্ছে
ময়মনসিংহের ভালুকায় সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইলের কারখানায় সুতা উৎপাদন হচ্ছেছবি: সংগৃহীত
জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে পোশাকের মূল কাঁচামাল সুতা উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে পৃথিবীতে। বাড়ছে পোশাকের বর্জ্য, অপচয় হচ্ছে পানি, বিষাক্ত রাসায়নিকে নষ্ট হচ্ছে মাটি, বাড়ছে কার্বন নিঃসরণও। বিনষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। দূষিত হচ্ছে পরিবেশও।

এত কিছুর পরও এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে পোশাকবর্জ্যের মাত্র ১২ শতাংশ পুনর্ব্যবহার বা রিসাইকেল হয়। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য পোশাকবর্জ্যের পুনর্ব্যবহার নিয়ে চলছে পৃথিবীজুড়ে নানা গবেষণা। বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলোও ঝুঁকতে শুরু করেছে পুনঃ উৎপাদিত পণ্যে। বাংলাদেশেও পোশাকবর্জ্যের পুনর্ব্যবহার শুরু হয়েছে। একাধিক প্রতিষ্ঠান এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইল। সাইক্লো ফাইবার নামে তাদের একটি সুতার ব্র্যান্ডও রয়েছে।

সাইক্লো ফাইবারের সুতা পুরোনো পোশাক বা ঝুট কাপড় দিয়ে উৎপাদন করে সিমকো। ২০১০ সালে সিমকো গ্রুপ যখন এই প্রকল্পে হাত দেয়, তখনো বিষয়টি এতটা জোরেশোরে আলোচনায় আসেনি। ফলে অনেকেই তখন বেশ অবাক হয়েছিলেন। কেউ কেউ এ উদ্যোগের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন।


সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইলের পরিচালক মুস্তাফাইন মুনীর
সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইলের পরিচালক মুস্তাফাইন মুনীর
এমনটাই জানালেন সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইলের পরিচালক মুস্তাফাইন মুনীর। তিনি বলেন, এক দশক আগে আমার বাবা খাজা মুনীর মাশুকুল্লাহ এই উদ্যোগ নেন। সে সময় একটি স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠানের টি-শার্টের ঝুট থেকে সুতা তৈরির বিষয়টি জানার পর বাবা ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অনুধাবন করতে পারেন। তখন বাবা ভাবলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর টি-শার্ট তৈরি হয়। সেই টি-শার্টের ঝুট থেকে পুনঃ উৎপাদনের মাধ্যমে সহজেই মানসম্পন্ন সুতা উৎপাদন করা সম্ভব। এভাবেই শুরু। আসলে সম্ভাবনার পাশাপাশি অব্যবহৃত কাঁচামাল ব্যবহারে মূল্য সুবিধার বিষয়টি বাবাকে উদ্যোগী করে তোলে।

বাবার কাছ থেকে শুনে এই উদ্যোগের প্রতি আগ্রহী হন যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা মুস্তাফাইন মুনীর। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের পাশাপাশি সংগীত ও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের ওপর পড়াশোনা করেন। পড়ালেখা শেষে ২০১১ সালে দেশে ফিরে হাল ধরেন এই প্রকল্পে। তার হাত ধরেই এখন এগিয়ে চলছে সিমকোর পুনঃ উৎপাদন ব্যবসা।

সিমকো সুতা তৈরির জন্য সাধারণত পোশাক কারখানা থেকে সংগ্রহ করা ঝুট কাপড় ব্যবহার করে। এ ছাড়া কোনো ব্র্যান্ডের বাতিল হওয়া নতুন পোশাকও ব্যবহার করা হয়। তবে সুতার শক্তি বাড়াতে অনেক ক্ষেত্রে নতুন তন্তু বিশেষ করে তুলা (ভার্জিন কটন) যুক্ত করা হয়। শক্তির তারতম্য অনুযায়ী ঝুটের সঙ্গে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ অন্য তন্তু মেশানো হয়ে থাকে।

ঝুট কিংবা পুরোনো কাপড় দিয়ে সুতা তৈরি করতে কোনো রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর বা রং করার প্রয়োজন হয় না। তাতে পানির সাশ্রয় হয়। কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণও কমানো যায়। তবে বাংলাদেশে উৎপাদিত ঝুটের মাত্র ২০ শতাংশ দেশে পুনর্ব্যবহার হচ্ছে। বাকি ৮০ শতাংশ রপ্তানি হচ্ছে ভারত ও চীনে। এমন তথ্য দিয়ে মুস্তাফাইন মুনীর জানান, দেশীয় বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে এই ঝুট পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য। যদিও বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডই তাদের নির্ধারিত তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়ায় ঝুট পাওয়া কিছুটা সহজ হয়েছে।

নিট ও ওভেন—উভয় ধরনের পোশাকের জন্যই সুতা তৈরি করে থাকে সাইক্লো। তবে এই সুতায় মাঝেমধ্যে রঙের তারতম্য ঘটে থাকে। যদিও সেটা খুব একটা যে চোখে পড়ার মতো, তা-ও নয়। সাইক্লো ফাইবার ৬ সিঙ্গেল থেকে ৩০ সিঙ্গেল পর্যন্ত বিভিন্ন কাউন্টের হয়ে থাকে। পুনঃ উৎপাদিত সুতার দাম সাধারণ সুতার চেয়ে ১৫-২০ শতাংশ কম বলে জানান মুস্তাফাইন মুনীর।

সাইক্লোর তৈরি সুতা দিয়ে টি-শার্ট, পোলো শার্ট, সোয়েটার, ডেনিম কাপড়, শার্ট, জিনস ইত্যাদি ছাড়াও গ্লাভস, মোজা, কমফোর্টার, হোম টেক্সটাইল, ব্যাগসহ নানা ধরনের অনুষঙ্গও তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি পণ্যের ধরন অনুযায়ী তৈরি হয় সুতা। বর্তমানে সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইল এইচঅ্যান্ডএম, জারা, প্রাইমার্ক, বারশকা, বেস্টসেলার, লিডল, কিয়াভি, কোহল’স, ওয়ালমার্ট, কিক, হেমা, রেনার, অ্যাডিডাস, নাইকি, টার্গেট, ইন্ডিটেক্সসহ অন্তত ৪০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুতা নিয়ে থাকে এইচঅ্যান্ডএম। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মৌসুমেই ১৫ লাখ কেজি সুতা কিনে থাকে।

সিমকো স্পিনিং অ্যান্ড টেক্সটাইলের পরিবেশবান্ধব সুতা তৈরির এ যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালে। মুস্তাফাইন মুনীর জানান, ২০১৫ থেকে ২০২১—এই ছয় বছরে পোশাকবর্জ্য ব্যবহার করে ১০ হাজার টনের বেশি সুতা উৎপাদিত হয়েছে ঝুট ব্যবহার করে। এতে সাশ্রয় হয়েছে ৭৫ হাজার টন কার্বন ডাই-অক্সাইড, ২০৬ কোটি লিটার পানি এবং ৭১ হাজার টন ক্ষতিকারক বিষাক্ত বর্জ্য।

ময়মনসিংহের ভালুকার কারখানায় বর্তমানে প্রতিদিন ১৩ টন সুতা তৈরি করছে সিমকো। ২৫০ কর্মী নিয়ে শুরু করা এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কাজ করছেন ৭০০ কর্মী। গত দুই বছরে তাঁদের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে ৬০ শতাংশ। মুস্তাফাইন মুনীর জানান, ২০১১-১২ অর্থবছরে তাঁদের উৎপাদন ছিল ২ হাজার ৪০০ টন সুতা, যার আর্থিক মূল্য ছিল ৩৬ লাখ মার্কিন ডলার। আর গত ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪০০ টনে, যার অর্থমূল্য ১ কোটি ৩৫ লাখ ডলার।
সাইক্লো ব্র্যান্ডের যে সুতা তৈরি হচ্ছে, তা সবই নতুন বর্জ্য থেকে। তবে পুরোনো বর্জ্য ব্যবহার করে সুতা উৎপাদনের সমূহ সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাঁচামাল (পুরোনো পোশাক) পাওয়া না যাওয়ায় সেটা এখনো সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশের ক্রেতারা পুরোনো সুতায় তৈরি পোশাকের প্রতি ততটা আগ্রহী নয়। তা সত্ত্বেও পোশাকের দেশীয় ব্র্যান্ড ঢাকা রিপাবলিক, পারা, খেলো বিডি, মোটিফ এবং হ্যান্ডটাচ সাইক্লো ফাইবার ব্যবহার করে থাকে।

পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ আবারও বিশ্বে ২য় অবস্থানে।

পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ আবারও বিশ্বে ২য় অবস্থানে। 

২০২১ এর তৈরি পোশাক এক্সপোর্ট আয় অনুযায়ী বাংলাদেশ আবারো পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের ২য় হবার সন্মান ফিরে পেয়েছে। বাংলাদেশ সকল লিমিটেশন কাটিয়ে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের স্বপ্ন পূরণ করবে এই প্রত্যাশা করি। 
EPB তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ আয় করে $৩৫.৮১ বিলিয়ন। ভিয়েতনাম আয় করে $৩২.৭৫ বিলিয়ন। (২০২১) 

তথ্য: Textile Today

Wednesday, 9 February 2022

বাংলাদেশের পরবর্তী সেরা ব্যাবসা হবে শিপিং বিজনেস!

বাংলাদেশের পরবর্তী সেরা ব্যাবসা হবে শিপিং বিজনেস!

বাংলাদেশের শিপিং কর্পোরেশন এর অধীনে ধুকতে থাকা পুরাতন জাহাজ যখন একের পর এক অবসরে পাঠানো হচ্ছিল, আমাদের সামনে বিকল্প তেমন ছিলনা। 

বৈদেশিক বাণিজ্য যেখানে $১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে (এর ৯০% সমুদ্র পথে), শুধুমাত্র জাহাজ ভাড়া দিতেই বাংলাদেশকে খরচ করতে হয় ৩০,০০০ কোটি টাকার বেশি! 

কিন্তু প্রাইভেট সেক্টর এগিয়ে আসায় পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নিয়েছে। জাহাজের সংখ্যা যখন কমতে কমতে ১৫ এর নিচে সেখান থেকেই ঘুড়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। মাত্র কয়েক বছরেই সরকারি বেসরকারি জাহাজের বহরে নতুন জাহাজ যুক্ত হতে থাকে। বর্তমানে দেশে সমুদ্রগামী জাহাজ এর সংখ্যা দাড়িয়েছে ৮০ টি। শুধুমাত্র বিগত ৪ বছরেই যুক্ত হয়েছে ৫৬ টি জাহাজ!

দেশের শিপিং কোম্পানিগুলি ভাড়া বাবদ আয় করেছে ৩,১১০ কোটি টাকা!

এবার আসা যাক ভিন্ন প্রসংগে। 

বর্তমানে বিশ্বে জাহাজের মালিকানার বিবেচনায় বাংলাদেশ খুব দ্রুত উপরে উঠে এসেছে। বর্তমানে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৯ তম যেখানে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা যথাক্রমে ১৬ তম, ৮৭ তম ও ৮৭ তম। 

এবার আরেকটা ছোট উদাহরন দেয়া যাক। বাংলাদেশের মোট ৮০ টা জাহাজের ভেতর মাত্র ৬ টি হচ্ছে কন্টেইনারবাহী জাহাজ। আর এই ৬ টি জাহাজের মালিক বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান H. R. Lines। বাংলাদেশের কন্টেইনার পরিবহনের সিংহভাগ দখল করে আছে Mearsk। কিন্তু মজার বিষয় হল, বিশ্বের কন্টেইনার ভেসেল কোম্পানির লিস্টে বাংলাদেশের পতাকাবাহী এইচ আর লাইন্স ৭১ তম স্থান দখল করে আছে। ১০০ কোম্পানির মধ্যে সাউথ এশিয়ার শুধু আরেকটি কোম্পানি আছে। সেটা ভারতের সরকারি শিপিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া। তবে তাদের অবস্থান বাংলাদেশের নিচে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের উপরে কারো অবস্থান নেই। 

এইচ আর লাইনের বর্তমান সক্ষমতা ৬ জাহাজে ৯০০০ টুয়েন্টি ফিট কন্টেইনার। বর্তমানে তারা মাসে ১৭০০০ কন্টেইনার পরিবহন করতে পারে। খুব শিঘ্রই এই কোম্পানিতে আরো ১৭৪০০ কন্টেইনার সক্ষমতার ৬ টি জাহাজ যুক্ত হতে যাচ্ছে। 

চট্টগ্রাম থেকে কন্টেইনার জাহাজ চীন, সিংগাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও ইতালি যায়। এসব রুটে ২৫ কোম্পানির ৮৫ টি জাহাজে ১,৫০,০০০ কন্টেইনার বহনের সক্ষমতা রয়েছে। এখানে বাংলাদেশের জন্য বড় একটি বাজার রয়েছে ধরার মত। 

বাংলাদেশ ফ্লাগ ভেসেল প্রটেকশন অর্ডিনেন্স জারি হয় ২০১৯ সালে যেখানে এখন বাধ্যতামূলক কমপক্ষে ৫০% সমুদ্রগামী কার্গো বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজে নেয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছে। আর এর ফলেই ধেয়ে আসছে দেশি বিনিয়োগ। 
বিশ্বে এখন শিপিং খরচ বেড়ে গেছে। বুকিং দিয়েও জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে লিড টাইম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ খুব সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েই নেমেছে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ শিপিং কস্ট কমিয়ে আনতে এবং লিড টাইম কমিয়ে আনতে ইউরোপের সাথে সরাসরি সমুদ্রপথে সংযোগ চালু করেছে। সম্প্রতি সোঙ্গা চিতা নামে জাহাজ প্রথম চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে গিয়েছে ইতালির উদ্দেশ্যে। এতে আগে যেখানে ৪০ দিন সময় লাগত সেটা ২৪ দিন কমে মাত্র ১৬ দিন লাগবে। শিপিং কস্ট কমবে ৪০%। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। 

শিপিং এর জন্য বিদেশ নির্ভরতা কমাতে পারলে শুধু ভাড়া বাবদ কয়েক বিলিয়ন ডলার কমানো সম্ভব। সেই সাথে সাপ্লাই চেইনের দুর্বলতা কমিয়ে আনা যাবে। 

এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। 

Friday, 4 February 2022

চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কার বন্দর ঘুরে ইতালিতে যেতে স্বাভাবিকভাবে সময় লাগে ২৪ থেকে ২৮ দিন।

চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কার বন্দর ঘুরে ইতালিতে যেতে স্বাভাবিকভাবে সময় লাগে ২৪ থেকে ২৮ দিন। এখন সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কায় বড় জাহাজে বুকিং পেতে দেরি হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই সময় লাগছে ৩০ থেকে ৩৫ দিনের বেশি। তবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে ইতালিতে পণ্য রপ্তানির এই সময় কমিয়ে দিচ্ছে চট্টগ্রাম-ইতালি সরাসরি জাহাজ সেবা। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতারা বলছেন, এখন ভিয়েতনামের চেয়ে অন্তত এক-দুই সপ্তাহের কম সময়ে ইতালির বন্দরে রপ্তানি পণ্য পাঠাতে পারবেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা।

Thursday, 3 February 2022

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ব্যয় বাড়াতে পারে নিউইয়র্ক বিল

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ব্যয় বাড়াতে পারে নিউইয়র্ক বিল 

নিউইয়র্ক ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পণ্যের সাপ্লাই চেইনে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে কমপ্লায়েন্সে আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। জার্মানিসহ কয়েকটি দেশে এ বিষয়ে আইনও পাস হয়েছে।

বিশ্বের ফ্যাশনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টেটে সম্প্রতি একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে, যাতে ফ্যাশনের বড় ব্র্যান্ডগুলোসহ পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত পক্ষগুলোকে এ্যাকাউন্টেবিলিটির মধ্যে আনা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোন স্টেট হিসেবে নিউইয়র্কে ফ্যাশন সাস্টেইনেবিলিটি অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট নামে আনা এ বিলটি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

নিউইয়র্ক ছাড়াও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পণ্যের সাপ্লাই চেইনে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে কমপ্লায়েন্সে আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। জার্মানিসহ কয়েকটি দেশে এ বিষয়ে আইনও পাস হয়েছে। কোম্পানিগুলো যাতে তাদের পুরো সাপ্লাই চেইনে হিউম্যান রাইটস ও এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন মানার বাধ্যবাধকতার মধ্যে আসে, সেটি নিশ্চিত করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এতে সাপ্লাই চেইনের অন্যতম পার্ট হিসেবে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য, তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য উৎপাদনকারীদের উপর কী ধরনের প্রভাব আসতে পারে?

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি উৎপাদন বাজারের অনিবার্য ভবিষ্যত। ফলে এই ধরনের ব্যবস্থাকে আর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে বাংলাদেশের উৎপাদকদের আরও কমপ্লায়েন্স ও অ্যাকাউন্টেবিলিটির মধ্যে আসতে হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে বাড়তি ব্যয়ের একটি ধাক্কা আসতে পারে।

তবে পরিস্থিতির আলোকে এসব কমপ্লায়েন্সের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে পারলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের সামনে উজ্জল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।

আর পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা মনে করছেন, বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চল আলাদা আলাদা নিয়মকানুন তৈরি করে তাদের খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর বদলে ইউনিফাইড কোড অব কন্ডাক্ট তৈরি করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। তবে তাদের বেশিরভাগই মনে করছেন, আমদানিকারক দেশগুলোর এমন উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের উৎপাদনকারীদের জন্য বড় ধরনের কোনো সমস্যা তৈরি করবে না।

সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনটি বিশ্বব্যাপী পোশাক এবং পাদুকা তৈরি কোম্পানিগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে। যেসব কোম্পানির ১০০ মিলিয়নেরও বেশি রাজস্ব রয়েছে এবং যারা নিউইয়র্কে ব্যবসা করছে, এমন কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য হবে এটি।

এই ধরনের কোম্পানিগুলোকে তাদের সাপ্লাই চেইনের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ম্যাপ করতে হবে। ফার্ম থেকে শুরু করে যেখানে কারখানা এবং শিপিংয়ের মাধ্যমে কাঁচামাল উৎপন্ন হয়, সবখানে ম্যাপ করতে হবে তাদেরকে।

ন্যায্য মজুরি, শক্তি, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন, পানি এবং রাসায়নিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে কোন ক্ষেত্রে তাদের সবচেয়ে বেশি সামাজিক এবং পরিবেশগত প্রভাব রয়েছে তা প্রকাশ করতে হবে কোম্পানিগুলোকে। এসব প্রভাব, বিশেষ করে কার্বন নির্গমন কমানোর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে তাদেরকে।

সবশেষে, কোম্পানিগুলোকে তাদের পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ প্রকাশ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, তারা কতটা তুলা বা চামড়া বা পলিয়েস্টার বিক্রি করে সেই তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করতে হবে।

বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি রুবানা হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এর মানে সরবরাহকারীদের ওপর চাপ বাড়বে।"

"বর্তমানে বিশ্বে সবক্ষেত্রেই রয়েছে দায়বদ্ধতা। সব পক্ষকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। যতক্ষণ সস্তা পণ্যের খেলা চলছে, ততক্ষণ টেকসইতার দিকে ব্র্যান্ডগুলোর কোনও পদক্ষেপ অবহেলা করা হবে এবং সরবরাহকারীর উপর ফেলা চাপও বৃথা যাবে," তিনি মনে করেন।

তিনি আরও বলেন, "পণ্যের ধরন অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে, মূল্যের কাঠামো আরও ভালোর দিকে সংশোধন করতে হবে। তবে শেষ পর্যন্ত টেকসই ব্যবসায়ী ব্যবস্থা অনুশীলনকারী কোম্পানিকে অবশ্যই টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে।"

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান মনে করেন, আইনটি পাশ হলে কী ধরণের ইমপ্যাক্ট বাংলাদেশের রপ্তানিতে আসে, তা কিছুদিন পর বুঝা যাবে। তিনি বলেন, "বড় ধরণের ইমপ্যাক্ট না হলেও খরচ বেড়ে যাবে।"
তিনি আরও বলেন, "কমপ্লায়েন্স বা এনভায়রনমেন্টাল বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে অনেক এগিয়েছি। বিশ্বের বেস্ট প্র্যাকটিস এবং গ্রিন কারখানা এখন বাংলাদেশে। গণহারে কেউ বলতে পারবে না, এখানে গুড প্র্যাকটিস নেই। যেসব জায়গায় ঘাটতি রয়েছে, আমরা সেখানে কাজ করছি।"

পোশাক খাতে এনভায়রনমেন্ট নিয়ে কাজ করেন, এমন একজন বিশেষজ্ঞ টিবিএসকে বলেন, বিভিন্ন দেশ এখন সাপ্লাই চেইনকে কমপ্লায়েন্ট করতে নতুন নতুন আইনকানুন নিয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। বিভিন্ন দেশ তাদের নিজেদের মত করে নিয়মকানুন আনছে। এতে ঝামেলা এবং ব্যয় বাড়বে। কিন্তু বাড়তি ব্যয় কোত্থেকে আসবে, তার কোন মেকানিজম নেই। কেননা বায়াররা প্রতিনিয়ত কম দামে কিনতে চায়।

আবার একেক দেশ একেক নিয়ম নিয়ে আসায় জটিলতাও বাড়বে। তার চেয়ে বরং একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন আসা যৌক্তিক বলে মত দেন তিনি।

রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান এবং বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ডক্টর এম এ রাজ্জাক টিবিএসকে বলেন, "সাপ্লাই চেইনে যেসব দেশের ডকুমেন্টেশন ব্যবস্থা ভালো, তাদের জন্য এই নতুন আইন সমস্যা তৈরি করবে না। এখানকার সাপ্লাই চেইনের বড় একটি অংশের ডকুমেন্টেশন ব্যবস্থা কিংবা সুশাসনে দুর্বল থাকায় বাংলাদেশ এ দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। যথাযথ ডকুমেন্টশন থাকলে অনিয়মের সুযোগ কমে যায়।"

তবে এ ব্যবস্থায় এগিয়ে যেতে পারলে বাংলাদেশ অন্য প্রতিযোগীদের তুলনায় এগিয়ে যাবে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলোকে ম্যাপিং নির্দেশিকা মেনে চলার জন্য ১২ মাস সময় দেওয়া হবে (প্রভাব প্রকাশের জন্য দেওয়া হবে ১৮ মাস)। যদি তারা আইন লঙ্ঘন করে, তাহলে তাদের বার্ষিক আয়ের ২ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। এই জরিমানা পরিবেশ সংরক্ষণ বিভাগ পরিচালিত নতুন একটি তহবিলে চলে যাবে এবং পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্পে তা ব্যবহৃত হবে। এছাড়া, নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল নন-কমপ্লায়েন্ট বা সম্মতি দেয়নি এমন কোম্পানিগুলোর একটি বার্ষিক তালিকাও প্রকাশ করবেন।

স্টেট সিনেটর আলেসান্দ্রা বিয়াগি এবং অ্যাসেম্বলিওম্যান অ্যানা আর কেলেসের স্পন্সর করা এ আইনটি বিশ্বব্যাপী পোশাক ও পাদুকা কোম্পানিগুলোর জন্য প্রযোজ্য হবে। এই কোম্পানিগুলো নিউইয়র্কে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবসা করছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী সিনেটর বিয়াগি এক বিবৃতিতে বলেছেন, "এই আইনটি শ্রম, মানবাধিকার এবং পরিবেশগত সুরক্ষার দিকগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া বিষয়টি নিশ্চিত করবে।"
 

 
সোর্সঃ 
THE BUSINESS STANDARD

বন্ডের অপব্যবহারেই কি নষ্ট হচ্ছে স্থানীয় পোশাক শিল্পের বাজার?

বন্ডের অপব্যবহারেই কি নষ্ট হচ্ছে স্থানীয় পোশাক শিল্পের বাজার?

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তৈরী পোশাক শিল্প। দেশের মোট প্রবৃদ্ধির ছয়-আট শতাংশ আসে এই সেক্টর থেকে। পোশাক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে কাপড় (ফেব্রিক্স)। যখন দেশীয় টেক্সটাইল শিল্প ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাপড় সরবরাহ করতে পারে না, তখন প্রতিবেশী দেশগুলো (যেমন: ভারত, পাকিস্থান, চীন, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি) থেকে আমদানী করতে হয়। সরকারের আইন অনুযায়ী কোন পণ্য বিদেশ থেকে আমদানী করতে হলে সেই পন্যের উপর নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু তৈরী পোশাক শিল্পকে আরও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করার জন্য কাস্টমস বন্ডের মাধ্যমে শুল্কবিহীন পণ্য আমদানীর সুযোগ প্রদান করেছে। কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী এই সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে শুল্ক ফ্রি আমদানীকৃত পণ্য স্থানীয় বাজারে স্বল্প মূল্যে ছেড়ে দিচ্ছে। এক দিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে স্থানীয় টেক্সটাইল শিল্প অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

আশির দশকে টেক্সটাইল শিল্প দেশীয় শিল্প হিসাবে যাত্রা শুরু করে এবং একটা নির্দিষ্ট সময় পার হবার পরে (নব্বই দশকের শুরুতে), সরকার বিশ্ব বাজারে এই দেশীয় শিল্পের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানী করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতেই রপ্তানীর পরিমানের উপর ভিত্তি করে টেক্সটাইল মালিকদেরকে ২৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়া হয়। সরকার এই খাত থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং রপ্তানি শুল্ক ফিরিয়ে আনার সুবিধাগুলি প্রবর্তন করে এবং পরবর্তীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে বন্ডের সুবিধা চালু করা হয়। এটা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় সাফল্য এই; যে ব্যবসা ২৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিয়ে শুরু হয়েছিল এবং এই খাতটি যখন পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠিত হয়, নগদ প্রণোদনার হারও ক্রমান্বয়ে কমতে কমতে বর্তমানে ৪ শতাংশে উপনীত হয়েছে। পোশাক শিল্পে সরকারের এই প্রণোদনা দেওয়ার পিছনে যুক্তিযুক্ত কারণও আছে। যখন কোন ব্যবসায়ী প্রতিবেশী দেশগুলি (যেমন ভারত, পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ড ইত্যাদি) থেকে কোন পণ্য আমদানি করেন তখন পণ্যের মূল্যের সাথে তার কিছু অতিরিক্ত ব্যয়ও (উদাহরণঃ ব্যাংক চার্জ, পণ্যে গাড়ীতে উঠানো ও নামানো ইত্যাদি) হয়ে থাকে। যেহেতু বাংলাদেশের পোশাক শিল্প তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করে, সেহেতু এই সুবিধা প্রদান না করলে উক্ত প্রতিযোগীতায় টিকে থাকা কঠিন হবে। সরকার ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বন্ডের মাধ্যমে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকার শুল্ক ফ্রি সুবিধা প্রদান করছেন। যেখানে পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানীর উপর আনুমানিক ৪০ হাজার কোটি টাকা শুল্ক ফ্রি করে দেওয়া হয়।

এটা অনুমান করা হয় যে, বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট বড় প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার গার্মেন্টস আছে কিন্তু বিজিএমইএ অধীনে নিবন্ধনকৃত গার্মেন্টস এর সংখ্যা পঁচিশ শত থেকে তিন হাজার। সুতরাং বাকি গার্মেন্টসের কোন কাগজপত্র না থাকা সত্বেও তারা তাদের কার্যক্রম পরিচলনা করে যাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল এই, কিছু বৈধ ও অবৈধ গার্মেন্টস এবং অল্প সংখ্যক টেক্সটাইল মিল আছে, যারা সরকারের প্রদত্ত বন্ড সুবিধাকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে মুনাফা উপার্জন করছে এবং দেশীয় শিল্পকে হুমকির মুখে পতিত করছে।
আইন অনুযায়ী বন্ডের লাইসেন্স ব্যবহারের এর প্রধান শর্ত হল বন্ডের পণ্য রপ্তানী ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু আইনে এটাও উল্লেখ আছে, যদি কোন ব্যবসায়ী বন্ডের মালামাল সামগ্রী স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে চায় (সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ), সেক্ষেত্রে বন্ড কমিশনারেট থেকে অনুমতি পত্র সংগ্রহ এবং বাণিজ্যিক শুল্ক প্রদান করতে হবে। এই আইন লংঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের যথাযথ আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করার এখতিয়ার রয়েছে। বর্তমানে কিছু সংখ্যক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আইনকে তোয়াক্কা না করেই তাদের আমদানীকৃত বন্ডের কাপড় খোলা বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে এবং একটি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পক্ষান্তরে, দেশীয় টেক্সটাইল শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, কারণ বন্ডের কাপড় শুল্কমুক্ত হওয়ায় এর বাজারদর তুলনামূলক কম। এজন্য স্থানীয় টেক্সটাইল শিল্প তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না এবং প্রতিযোগীতামূলক বাজারে ক্রমান্বয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ্ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সোয়াজ বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন যৌথভাবে ডিপার্টমেন্ট অফ্ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ডিফিড) এর অর্থায়নে বাংলাদেশের কাস্টমস বন্ডের অপব্যবহার শীর্ষক গবেষণাকর্মটি পরিচলনা করছে। বন্ডের মালামাল স্থানীয় বাজারে প্রবেশের ফলে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি স্থানীয় টেক্সটাইল শিল্প অস্তিত্বহীনতার সম্মুখীন হচ্ছে। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হল কাস্টমস শুল্কের হার কমিয়ে বন্ডের অপব্যবহার হ্রাস করা এবং সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থানীয় টেক্সটাইল শিল্পকে রক্ষা করা। গবেষণায় দেখা যায় যে, বন্ডের অপব্যবহার এমন একটি জটিল প্রক্রিয়া যা ক্রেতার অর্ডার থেকে শুরু করে পণ্য বিপণনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত হইতে পারে। বন্ডের এই অপব্যবহার মূলত দুইভাবে হয়ে থাকে যথা: বৈধ পথে এবং অবৈধ পথে। বৈধ পথ বলতে গার্মেন্টস মালিক ক্রেতার অর্ডারের উপর ভিত্তি করে সকল অফিসিয়াল কার্যক্রম সম্পন্ন করবে কিন্তু তার মধ্যে কোন এক জায়গায় অর্থের লোভে আকৃষ্ট হয়ে এই সূক্ষ্ম অপকর্মটি করে থাকে।

এক, বিদেশী ক্রেতার অর্ডারের উপর ভিত্তি করে বিজিএমইএ ইউটিলাইজেশন ডিক্লিয়ারেশন (ইউডি) ইস্যু করে এবং ঐ ইউডির বিপরীতে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ইউটিলাইজেশন পারমিশন (ইউপি) দিয়ে থাকেন। এই ইউপি ব্যবসায়ীকে বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আনতে সাহায্য করে। বিজিএমইএ ইউডি ইস্যু করার সময় ঐসকল অসৎ ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি কাপড় আনার জন্য চাহিদা পত্র দিয়ে থাকে। উদাহরন: একটি শার্টের জন্য ১ মিটার কাপড় প্রয়োজন কিন্তু তিনি তার চাহিদা পত্রে ১.২০ মিটার কাপড় প্রয়োজন উল্লেখ করেন। যদি তার অর্ডার এক লক্ষ শার্টের জন্য হয়ে থাকে তাহলে বিশ হাজার শার্টের কাপড় অতিরিক্ত নিয়ে আসবে। বিশ হাজার শার্টের কাপড় যেহেতু শুল্কমুক্ত এবং স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা থাকার কারণে উক্ত কাপড় ইসলামপুরের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাজারে ছেড়ে দেওয়া হবে।

দুই, গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানী করে হরমোনাইজড সিস্টেম (এইচএস) কোডের মাধ্যমে। অনেকসময় ইউডিতে ইস্যুকৃত এইচএস কোডের কাপড়ের পরিবর্তে অন্য এইচএস কোডের কাপড় নিয়ে আসে। যেমন, ইউডিতে ৫০ কাউন্ট সুতার কাপড় নিয়ে আসার কথা উল্লেখ থাকা স্বত্বেও ৮০ কাউন্ট সুতার কাপড় নিয়ে আসে। সাধারণত সুতার কাউন্ট যত বেশী কাপড়ের মূল্য তত বেশী হবে। সেই হিসাবে ৮০ কাউন্ট সুতার মূল্য ৫০ কাউন্ট সুতার তুলনায় বহুগুণ।

তিন, বিদেশ থেকে আমদানীকৃত কাপড়গুলো পরিমাপ করা হয় কেজিতে। সেক্ষেত্রে কাপড় যত মিহি (চিকন সুতা) হবে ওজনও তত কম হবে। উদাহরণঃ যদি এক কেজিতে দুইটি প্যান্টের কাপড় হয়, সেখানে সমপরিমাণ ওজনে ১০টি থ্রি-পিসের কাপড় পাওয়া যায়। বর্তমান বাজার মূল্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, প্যান্টের কাপড়ের তুলনায় থ্রি-পিসের মূল্য অনেক বেশী।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল এসোসিয়েশন (বিটিএমএ) এর মতে ১৩০টি গার্মেন্টস মালিকেরা এই কাজে সম্পর্কিত। বিটিএমএ এর সদস্যরা দেশের প্রাইমারী টেক্সটাইল সেক্টরে প্রায় ৭০ হাজার কোটি বিনিয়োগ করেছে এবং দেশের পোষাক শিল্পের প্রয়োজনীয় ইয়ার্ণ ও ফেব্রিকের সিংহভাগ যোগান দেওয়া ছাড়াও দেশের মানুষের ব্যবহারের জন্য কাপড় সমানভাবে যোগান দিয়ে যাচ্ছে। বিটিএমএ এর মতে দেশের স্থানীয় টেক্সটাইলের বাজারটি প্রায় ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকার। কিন্তু এই বাজারটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বন্ডেড ওয়্যার হাউজের মাধ্যমে নিয়ে আসা অবৈধ বিদেশী কাপড়ে। তাদের মতে, বছরে প্রায় আট-দশ লাখের বেশী থ্রী-পিস, বিপুল পরিমান শাড়ী, শার্ট-প্যান্টের কাপড়সহ অনান্য বস্ত্র সামগ্রী বিভিন্ন পথে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। বিশেষ করে ভ্রমণ ভিসা (নিউ মার্কেটের দোকানদাররা, অনলাইন শপিং পেজ, ঈদের শপিং), সীমান্ত হাট এবং আন্ত:সীমান্ত চোরাকারবারীর মাধ্যমেই বেশি ফেব্রিক্স আসে।

পোশাক শিল্পের মালিকরা বন্ড লাইসেন্স এর মাধ্যমে যে কাপড় আমদানী করে তা দুই বছরের জন্য তাদের নিজস্ব কারখানায় সঞ্চয় করে রাখতে পারে। বন্ড কমিশনারেট প্রতি বছর নিরীক্ষণের মাধ্যমে উক্ত পোশাক শিল্পের ক্রেতার অর্ডারের সাথে মজুতকৃত কাঁচামালের হিসাব মিলিয়ে থাকেন। যদি অর্ডার এবং সঞ্চয়ের মধ্যে কোন ব্যত্যয় ঘটলে সাথে সাথেই আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। উল্লেখ্য যে, কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ৭৬টি গার্মেন্টস কে চিহ্নিত করেছে, যারা এই অসৎ কাজে জড়িত এবং তাদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, অনেক পোশাক শিল্পকে চিহ্নিত করা হয়েছে যাদের অবকাঠামোগত কোন অস্তিত্ব নেই কিন্তু কাগজ-কলমে তা সক্রিয়। এক্ষেত্রে তাদের বন্ড লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশের বড় পাইকারি কাপড়ের বাজারগুলোর মধ্যে ঢাকার ইসলামপুর, নরসিংদীর মাধবদী, এবং নারায়ণগঞ্জের টান বাজার অন্যতম। কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট পোশাক শিল্পের পাশাপাশি এই সকল বাজারেও বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করেন। সাম্প্রতিক অভিযানসমূহ কিছুটা হলেও দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের জন্য স্বস্তিদায়ক পরিবেশ তৈরী করছে। পুলিশের সহায়তায় বন্ড কমিশনারেট প্রতিনিয়ত ইসলামপুরে অভিযান পরিচলনা করছে এবং বন্ডে আসা কাপড়ের ট্রাক জব্দ করে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কাপড় ব্যবসায়ী সমিতিও তাদের মাসিক মিটিং এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে যে কোন ব্যবসায়ী বন্ডের অবৈধ মালামাল বিক্রি করতে পারবেনা। আর ইহার ব্যত্যয় ঘটলে মালিক সমিতি তার কোন দায়িত্ব নিবে না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচিত বাণিজ্যিকভাবে আমদানীকৃত পণ্যের শুল্কহার কমিয়ে দেওয়া, যাতে বন্ডের অপব্যবহার কমে। কারণ আমদানীকৃত পণ্যের শুল্ক তুলনামূলক কম হলে কাপড় ব্যবসায়ীরা বন্ডের কাপড় বিক্রয় করবে না, এতে তাদের ব্যবসায়িক মূলধন হারানোর ঝুঁকি অনেক বেশী। তাই সরকারের উচিত গবেষণার মাধ্যমে এই শুল্ক নীতিমালা পুনরায় প্রনায়ন করা। তাহলে, সরকার একদিকে যেমন এই সেক্টর থেকে বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারবে, অন্য দিকে দেশীয় শিল্পকেও রক্ষা করা সম্ভব হবে।

রায়হান আহমেদ: ব্র্যাক ইন্সটিটিউট অফ্ গভর্ন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহযোগী হিসেবে কর্মরত। নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব, প্রতিষ্ঠানের নয়। 

গবেষণাটি করা হয়েছে এন্টি করাপশন এভিডেন্স (এইস) সমষ্টির অংশ হিসেবে, সওয়াস-এইস-এর অর্থায়নে।