Sunday, 24 July 2022

বায়িং হাউজের কর্মকর্তা থেকে শিল্প গ্রুপের মালিক। আরডিএম গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

বায়িং হাউজের কর্মকর্তা থেকে শিল্প গ্রুপের মালিক 

আরডিএম গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

১৯৯৬ সালে স্নাতক পাসের পরদিনই একটি বায়িং হাউজে চাকরি নেন রাকিবুল আলম চৌধুরী। 

প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন থেকে রপ্তানি প্রক্রিয়ার সব ক্ষেত্রেই কাজ শিখেছেন হাতে কলমে। চাকরির পাশাপাশি স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনাও চালিয়ে গেছেন সমানতালে।

চাকরির বেতনের জমানো ৯ লাখ টাকা এবং পরিবারের ঋণ ১৮ লাখ সহ মোট ২৭ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে ২০০২ সালের আগস্টে নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় গার্মেন্টস কারখানা দেন। 

৮ হাজার ৫০০ স্কয়ার ফিটের এইচকেসি অ্যাপারেলস নামের ওই কারখানায় ৩৬টি মেশিন ও ৭৮ জন কর্মী নিয়ে রাকিবুল আলম চৌধুরীর গার্মেন্ট শিল্পে পথচলা শুরু হয়। 

সেই থেকে গত ২০ বছরে একে একে গড়ে তুলেছেন শতভাগ রপ্তানিমুখী ৬ টি কারখানা। প্রায় ৬৩০০ জন কর্মী কাজ করছে আরডিএম গ্রুপের এসব কারখানায়। কারখানার উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায়। 

গার্মেন্টস ব্যবসার পাশাপাশি আইটি এবং কৃষি খাতে ব্যবসা রয়েছে রাকিবুলের। 

আরডিএম গ্রুপের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৫০০ কোটি টাকা।

কঠোর পরিশ্রম এবং এই শিল্পে একাগ্রতার কারণে এতদূর আসতে পেরেছেন বলে মনে করেন রাকিবুল। একই সাথে 

মনে করেন, কারখানায় নিয়োজিত প্রতিটি শ্রমিক কর্মচারীর আন্তরিকতা তাকে সফলতা এনে দিয়েছে। 

"তাই আমি প্রতিটি কর্মীকে আমার পরিবারের সদস্য মনে করি", বলেন তিনি। 

২০০২ সালে প্রথম কারখানা করার পর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। একে একে বাড়তে থাকে রাকিবুলের কারখানা। 

 ২০০৭ সালে আরডিএম এপারেলস নামে আরেকটি কারখানা করেন রাকিবুল। এখানে ৮০ লাখ টাকা বিনিয়োগে ৩৯ হাজার স্কয়ার ফিটের কারখানায় ১২০ টি মেশিনে ৩৫০ জন কর্মী কাজ শুরু করে।

এরপর ২০০৯ সালে আতুরার ডিপো এলাকায় কম্বাইন্ড অ্যাপারেলস নামে ৪২ হাজার বর্গফুটের একটি পুরাতন কারখানা টেকওভার করেন।  

এর তিন বছর পর ২০১২ সালে সামার্ট ফ্যাশন নামে ২৭ হাজার বর্গফুটের আরেকটি কারখানা করেন। ১৮০টি মেশিন ও ৪০০ কর্মী নিয়ে এ কারখানার যাত্রা শুরু হয়। 

এরপর ২০১৮ সালে ইউনি গার্মেন্টস নামে আরেকটি কারখানা টেকওভার করেন রাকিবুল। ১.৬ একর নিজস্ব জায়গার এই কারখানায় ১১০০ মেশিনে ২৪০০ কর্মী কাজ করে।

বর্তমানে আরডিএম গ্রুপের ৬ টি কারখানায় নিটওয়্যার জাতীয় আউটার ওয়্যার, লাইট ওভেন পণ্য উৎপাদিত হয় যা আমেরিকা ও ইউরোপে রপ্তানি হয়। এর মধ্যে আমেরিকায় ৭০% এবং ৩০% ইউরোপে। 

মাঝখানে কিছুদিন মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হয়েছিলো কিন্তু করোনার কারণে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

এই শিল্প গ্রুপটি মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে গার্মেন্টস পল্লীতে ৬ একর জমি বরাদ্দ নিয়েছে। যেখানে একটি টেক্সটাইল গড়ে তোলা হবে। এখানে বিনিয়োগ হবে ২০০ কোটি টাকা।

রাকিবুলের কৃষি খামারে বর্তমানে ১৩২ টি গরু রয়েছে। এই খাতে বিনিয়োগ ৬ কোটি টাকা। 

এছাড়া আইটি খাতে তিনি ডাটা এক্সচেঞ্জ নামে একটি কোম্পানি খুলেছেন। 

আরডিএম গ্রুপের বর্তমানে ৫ টি বন্ড লাইসেন্স রয়েছে। আরো একটি লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

চ্যালেঞ্জ কী? 

এতটুকু পথ পাড়ি দিতে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হতে হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিজিএমইএ'র এই সহ সভাপতি বলেন, চট্টগ্রামে আমরা সবচেয়ে বেশি সমস্যা মোকাবেলা করছি মিড লেভেল ম্যানেজমেন্টে দক্ষ জনবল নিয়ে। গ্রিন ফ্যাক্টরি এবং কমপ্লাইন ফ্যাক্টরি করার জন্য কমপ্লাইন্সের লোকবলের অভাব। এছাড়া মার্চেন্ডাইজিংয়ে গত দুই বছর ধরে দক্ষ জনবল গড়ে উঠলেও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার পদে এখনো সংকট রয়ে গেছে।

রাজধানী ঢাকা সহ আশপাশের জেলাগুলোতে যেভাবে সহজেই ব্যাংক ঋণ পাওয়া যায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সেভাবে পায়না। 

"চট্টগ্রামে রিজিওনাল ম্যানেজার ছাড়া ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বসেনা।চট্টগ্রামে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা নতুন উদ্যোক্তাদের বড় অংকের ঋণের কোন ফাইল ঢাকায় পাঠানোর সাহস করেনা। আমি নিজেই একটি গার্মেন্টস টেইকওভার করার সময় এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়েছি।"

এ কারণে চট্টগ্রাম শহরে ভালো কোন উদ্যোক্তা উঠে আসছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

তিনি আরো বলেন, গত আড়াই বছর ধরে চট্টগ্রোমের কোন কারখানা গ্যাস সংযোগ পায়নি। অথচ অন্যান্য খাতগুলো পাচ্ছে। এক সময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও ২০-৩০ লাখ টাকা দিয়ে গার্মেন্টস কারখানা করতে পারতো। কিন্তু এখন ৩০ কোটি টাকা দিয়েও গার্মেন্টস কারখানা করা কঠিন।

চট্টগ্রামে পোষাক খাতের পিছিয়ে পড়ার আরেকটি বড় কারণ জমির অধিক মূল্য । বাণিজ্যিক রাজধানী এবং বন্দর এলাকা হওয়ার কারণে দেশের অন্য জেলার শহরের তুলনায় চট্টগ্রাম শহরের জমির দামে বিশাল ব্যবধান। ঢাকায় শিল্প কারখানা যেভাবে আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠছে চট্টগ্রামে এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি।

তৈরির পোশাকের উজ্জল ভবিষ্যৎ 

পোষাক খাতের সম্ভবনা নিয়ে রাকিবুল বলেন, আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশের পোষাক খাতে প্রচুর পরিমানে অর্ডার আসবে। 

"সরকারের কাছে একটিই অনুরোধ, যদি লজিস্টিক সাপোর্ট পাই তাহলে চীন থেকে যেসব ব্যবসা বেরিয়ে আসছে সেগুলো আমরা নিজেদের দেশে নিয়ে আসতে পারবো। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে মূখ্য ভুমিকা পালন করতে হবে।"

দেশে এখনো ৯০ শতাংশ ফ্রেব্রিক চীন থেকে আমদানি করতে হয়। বিকল্প মার্কেট এখনো তৈরি হয়নি।

"২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে নিজেরা সক্ষমতা অর্জন করতে পারি তাহলে চীনের মুখাপেক্ষি হতে হবে না", বলেন তিনি।

No comments:

Post a Comment